দখিনের খবর ডেস্ক ॥ অলিগলিতে ব্যাঙয়ের ছাতার মত গড়ে উঠেছে চায়ের দোকান। এসব দোকানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে চা চক্র। তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে ওইসব চায়ের দোকানগুলোতে। ভোক্তার অভাবে অনেকটাই কমে গেছে চায়ের কাপের সুপরিচিত সেই টুংটাং শব্দও। তাই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দোকানগুলোতে কাচের কাপ বা গ্লাসের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ডিসপোজেবল (প্লাস্টিক ও কাগজের তৈরি) কাপ। যাকে সবাই এক কথায় ওয়ানটাইম কাপ বলেই জেনে থাকেন। দোকানির আয়োজনের পাশাপাশি এই কাপের প্রতি আগ্রহ রয়েছে ক্রেতাদেরও। তারা মনে করেন করোনাভাইরাস থেকে দূরে থাকতে ওয়ানটাইম কাপের বিকল্প নেই। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ধারণা এমনটি হলেও বাস্তবটা ভিন্ন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ওয়ানটাইম কাপ মানবদেহের জন্য ডেকে আনতে পারে মহাবিপদ। আর ফুটন্ত গরম পানিতে ধোয়া কাচের গ্লাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পাড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইরের দোকানে চা পান না করাটাই উত্তম বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সবখানের চায়ের দোকানে ব্যবহার হচ্ছে ডিসপোজেবল কাপ। দোকানিরা মাস্ক পরে ব্যবসা চালাচ্ছেন। তাদের এমন সচেতনতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। কোথাও কোথাও অবশ্য কাচের কাপে এখনও চা কেনাবেচা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ রোধে জীবাণু ধ্বংসের জন্য অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে ধুয়ে তারপর কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে এসব কাপে চা পানের কারণে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে দুই মাসেরও বেশি সময় সাধারণ ছুটি ছিল দেশে। তখন ফার্মেসি, কাঁচাবাজার ও মুদি দোকান ছাড়া সবকিছুই বন্ধ রাখতে বলা হয়।
কিন্তু বরিশাল নগরীর পাড়া-মহল্লায় লুকিয়ে অনেক দোকানিকে চা বিক্রি করতে দেখা গেছে। গত ৩১ মে সাধারণ ছুটি শেষে বরিশালের বেশিরভাগ গলি ও পথের ধারে চায়ের দোকান ফের জমে উঠেছে। তবে ডিসপোজেবল কাপ না হলে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নগরীর ভাটার খাল এলাকার চা-বিক্রেতা মোঃ সোহেল বলেন, আগে কাচের কাপে চা বিক্রি করতাম। সেগুলো রেখে দিয়েছি, করোনা ভাইরাস মহামারীর প্রকোপ গেলে আবারও এসব ব্যবহার করবো। এখন ওয়ানটাইম কাপে চা বিক্রি করি। তবে ক্রেতা আগের চেয়ে কম।
গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুন) নগরীর চৌমাথা এলাকার আরেক চা বিক্রেতা খালেদের কথায়, ওয়ানটাইম কাপে চা বিক্রি করছি সাত দিন হলো। এজন্য প্রতি কাপ চায়ের দাম দুই টাকা বাড়াতে হয়েছে। বর্তমানে প্রতি কাপ চা ৮ টাকা নিচ্ছি। ডিসপোজেবল কাপ কেনার কারণে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। তারপরও লোকজন চা কিনছেন। এদিকে এখনও অনেক দোকানে কাচের কাপে চা বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের দাবি, কাপ ভালোভাবে গরম পানিতে ধুয়ে তারপর চা পরিবেশন করছেন তারা। এতে জীবাণু থাকার কথা নয়।
এসব দোকানের ক্রেতাদের মুখে শোনা গেলো, গরম পানি দিয়ে ধুয়েই তো কাপে চা দেয়, তাতে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বরিশালে ফুটপাতে চায়ের দোকানে কাচের কাপ বা ডিসপোজেবল কাপে করোনাভাইরাস ছড়ায় কিনা তা নিয়ে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি আজকের বার্তাকে বলেন, গরম পানি ও ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে কতক্ষণ কাচের কাপটি পরিষ্কার করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে জীবাণু গেলো নাকি থাকলো। তাছাড়া শুধু গরম পানিতে কাপ পরিষ্কার করলেই করোনার জীবাণু মরবে না। করোনার জীবাণু মারতে হলে প্রতিবার ব্যবহারের পরে কাচের কাপটি প্রথমে ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড পরিষ্কার করে তারপর গরম পানিতে যদি কাপ মিনিট খানেক সময় রাখা যায়, তাহলে ভাইরাস নষ্ট হয়ে যাবে। কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড তো রাখতেই হবে। যদি তা না করা হয় তবে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। ডা. মো. মনোয়ার হোসেন মনে করেন, ওয়ান টাইম কাপ মানবদেহের জন্য নিরাপদ নয়। কারণ তা ব্যবহারের পূর্বে ধোয়া হয় না। এছাড়া কাপগুলো কিসের মধ্যে রাখা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে জীবাণুর সংক্রমণ হবে কিনা। যদি ঢাকনাসহ কোনও বাক্সে রাখা হয় তাহলে তা নিরাপদ থাকতে পারে। আর খোলা অবস্থায় থাকলে সংক্রমণ হওয়ার বিপদ আছে। কারণ কাপের আশেপাশে কেউ হাঁচি-কাশি দিলে এবং সেই ব্যক্তি যদি করোনা পজিটিভ হয় তাহলে জীবাণু থেকে যাবে। সেখান থেকে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
Leave a Reply